আকাশে ট্রেসার উড়ছে।
আকাশ আলো হয়ে উঠছে। তৈরি হচ্ছে আলোর নকশা। যেন বারবার কালো আকাশে ঝলমলিয়ে উঠছে উৎসবের হাউই বাতি। তারাবাতির মতো আগুনের ফুল্কি বেরুচ্ছে মেশিনগানের মুখ থেকে। বাজির শব্দের মতো গুলি উৎসব।অন্য ধরনের উৎসব। হত্যা ও ধ্বংসের উৎসব। এই উৎসবের জন্য কেউ কি তৈরি ছিল?
ঢাকার ঘুমন্ত মানুষ ভয়াবহ আতঙ্ক নিয়ে জেগে উঠলো? কি হচ্ছে? কি হচ্ছে ? সবাই জানে কি হচ্ছে, তারপরও যেনো কেউ কিছু জানে না। ভারী মিলিটারি ট্রাক, মিলিটারি জীপ, অবলীলায় রাস্তায় চলাচল করছে। সবকটি রাস্তায় না ব্যারিকেড ছিল, এতো দ্রুত সরালো কি করে? অদ্ভুত শব্দ হচ্ছে রাস্তায়, ট্যাঙ্ক নেমেছে কি ?
ভয় আআর কৌতূহল পাশাপাশি চলে। প্রচন্ড ভীত মানুষের কৌতূহলও হয় প্রচন্ড।
এরা জানালার শিক ধরে দাঁড়িয়েছে। দেখতে চেষ্টা করছে কি হচ্ছে বাইরে। চোখের সামনে প্রচণ্ড ধ্বংসযজ্ঞ দেখার আলাদা মাদকতা আছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই এক ধরণের ঘোর তৈরি হয়। তখন মানুষ যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না এমন কিছু করে। এরকম ই কিছু নিরীহ ছা পোষা মানুষ হঠাৎ করেই জয় বাংলা, জয় বাংলা বলে চেঁচাতে লাগলো। দীর্ঘ আন্দোলনে এরা হয়তো কখনো রাজপথে নামেনি। অফিসে গিয়েছে, অফিস থেকে ফেরার পথে বাজার করে নিয়ে এসেছে। চটের ব্যাগের ভিতর থেকে উঁকি দিয়েছে একটা লাউ, ইলিশ মাছের লেজ। আজ হঠাৎ তাদের কি হয়ে গেল ?
ভীত মানুষের কান্না ও চিৎকার শোনা যেতে শুরু করল তারও কিছু পরে…
[২৫ মার্চের রাতের শুরুটা ছিল এই রকম।
প্রতিবার হুমায়ূন আহমেদের “জোছনা ও জননী”র গল্পের এই অংশটুকু পড়ার সময় এই রাতটা যেন ঠিক আমার চোখের সামনে দেখতে পাই। ……… এই পৃথিবীর ইতিহাসে আর কোন দেশে এমন ভয়ংকর গণহত্যা আর ধ্বংসযজ্ঞের কালো রাত আসেনি।]