টিউব লাইটের আলো রুমটা আলোকিত করে রেখেছে। কিছুক্ষণ আগেই বাইরে বৃষ্টি হয়ে গেছে। আবহাওয়াটা চমৎকার। বৈদ্যুতিক পাখার বাতাস একেবারেই নিস্প্রয়োজন। তবুও পাখাটা সাই সাই শব্দে বাতাসের ঢেউ তুলে যাচ্ছে। এমন শীতল আবহাওয়ায় বাতাসেও শীতলতার গভীর ছোঁয়া রয়েছে। একেবারে শীত শীত ভাব।তারপরেও আরজুর মাথা বেয়ে ঘাম ঝড়ছে। পাশেই খাটে রঙ্গিন চাদরটা চুলে তেল দেয়া অনুগত বালকের মত পরিপাটি করে বিছানো। সেই বিছানার ওপর পড়ে আছে ছুড়ে ফেলা স্মার্ট ফোন চার্জার হেডফোন। সামনের টেবিলে খোলা বইয়ের পাতা গুলো তাকিয়ে আছে তার দিকে। একবার সে বইয়ের দিকে তাকায় আরেকবার বিছানায় ছড়ানো মোবাইলের দিকে। আজ সে মোবাইল ও বইয়ের মধ্যে পার্থক্যটা বুঝতে পেরেছে।শত্রুকে শত্রু আর বন্ধুকে বন্ধু হিসেবে চিনতে পেরেছে। কিন্তু সময় বড় নিষ্ঠুর । সময়ের খেলায় আরজু পুরোপুরি হেরে গেছে।
প্রায় এক বছর আগে আরজু বাবা মায়ের কাছে অনেক অনুনয় বিনয় করেছিল একটা স্মার্ট ফোনের জন্য। হাতে ফোন পেলে তার সীমিত ও সুন্দর ব্যবহার করবে। লেখাপড়াটাকে সহজ করার কাজেই সে এটি ব্যবহার করবে এমন হাজারো কমিটমেন্টের ফলশ্রুতিতেই তাকে বাবা মোবাইল কিনে দিয়েছিল।
মোবাইল হাতে পাওয়ার প্রথম দিনটা তার স্মৃতিতে আজো অম্লান। প্রথমেই সে ছুটে গিয়েছিল তার বন্ধু তারেকের কাছে। যার মোবাইলে সে এতদিন প্রক্সি দিয়েছে। সেই তারেক তাকে হাসি মুখে সম্ভাষণ জানিয়েছিল। জয়েন করিয়ে দিয়েছিল বেশ কিছু গ্রুপে। তারপর থেকেই শুরু হলো আরজুর ভার্চুয়াল জগতে বাঁধাহীন চলাফেরা। শুরু হলো ফেসবুক, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবার, ইনস্ট্রাগ্রাম, টুইটার, ইউটিউব, গুগল সহ সব জগতেই কৌতুহলের দৃষ্টি নিয়ে ঘুরে বেড়ানো। আর তখনি একটা ভার্চুয়াল অক্টোপাস আরজুকে জাপটে ধরে অতি সন্তর্পনে। আস্তে আস্তে গিলতে থাকে আরজু আর আরজুর সত্ত্বাটাকে। কখন যে আরজু সে অক্টোপাসের গহ্বরে তলিয়ে গেছে তা জানতেও পারেনি।
তারপর মা বাবা পরিবারের কারো কথাই আর সে গ্রাহ্য করেনি। পড়ার টেবিল বই খাতা সবই বিরক্তির তালিকায় গেঁথে শিকেয় তুলে রাখে।
কাল সকালে পরীক্ষা। এস এস সি পরীক্ষা। আজ রাতে বইয়ের আলোকিত পাতাগুলো আরজুর সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। সে আলোয় আরজু অক্টোপাসের গভীর গহ্বরটাকে চিনতে পেরেছে। সে আজ ছুড়ে ফেলে দিতে চায় মোবাইল চার্জার হেডফোন সহ সব উপকরণ। আশ্রয় খুঁজতে চায় বইয়ের পাতায়।
মনের ভেতর থেকে কে যেন ডেকে বলছে আজ বইয়ের পাতায় আশ্রয় খুঁজে আর কি হবে? গোল্ডেন টাইমটাতো ভার্চুয়াল অক্টোপাস গিলে ফেলেছে।
ক্রমেই আরজুর কান মুখ ক্রমেই কাল হয়ে উঠছে চোখ দুটো হয়ে উঠেছে লাল। সকল অসম্ভব্যতাকে উড়িয়ে দিয়ে এই চোখ দুটো ভার্চুয়াল অক্টোপাসকে পুড়িয়ে ছাই করে দিতে বদ্ধ পরিকর।
লেখক: এনামুল হক