গোপন রাত্রি

0
206

অমাবস্যার রাত। অন্য রাতের চেয়ে একটু বেশি কালো একটু বেশি নিরব। গ্রামের পিচ ঢালা পথ। চারদিকের শুনশান নীরবতা কালো রাতকে সমুদ্রের মত গভীর করে তুলেছে। সে আঁধারের সাথে নিজেকে মিশিয়ে বদরুল মেম্বার সন্তর্পণে এগিয়ে চলেছে। এমন অন্ধকার রাতে মেম্বার তার নেভি ব্লু শার্ট আর সোনালী কাজ করা কালো লুঙ্গি পড়নে জড়িয়ে বেড়ায়। এগুলো রাতের আঁধারের সাথে সহজেই মিশে যায়।

আম্বিয়া বেগমের বাড়িটা গ্রামের শেষ মাথার কাছাকাছি। আশেপাশে দু’এক ঘর বসতি আছে। তারা সবাই খেটে খাওয়া মানুষ। এশার নামাজের পরেই সবাই ঘুমিয়ে পড়ে। আর অমাবস্যার রাত মানে তো সন্ধ্যার সাথে সাথেই দরজা জানালা বন্ধ করে শুয়ে পড়া। এমন কালো রাত মেম্বারের জীবনে অনেক নতুন নতুন সুখের ঠিকানা এনে দেয়।

আজ এমনি একটা রাত। আম্বিয়া বেগমকে লুটে নেয়ার রাত। লুটে নেয়া জিনিসের মধ্যে  কি যে আনন্দ সেটা মেম্বার ভাল করেই জানে। আম্বিয়া বেগমের স্বামী বড় বাজারের মুদি ব্যবসায়ী। হঠাৎ করেই ষ্টক আইটেম ব্যবসা করতে গিয়ে বড় ধরণের লোকসানে পড়েছে। পাওনাদারেরা মেম্বরের কাছে বিচার চেয়েছিল। শালিসের দিনই প্রথম মেম্বার আম্বিয়াকে দেখেছিল। বেশ পর্দানশীল মহিলা। আম্বিয়া বোরখা পড়ে মেম্বারের সামনে এসেছিল। বয়সটা পঁচিশের আশেপাশে হবে। এখনো কোন ছেলে মেয়ে হয়নি। লম্বা শ্যামলা গঠনের মধ্যম মানের শরীরটা চিনতে মেম্বারের সুচারু চোখ ভুল করেনি। সেই থেকে মেম্বার টকেটকে থেকেছে। আজ সেই সুযোগ। আম্বিয়ার স্বামী আজ বাড়িতে নেই।

মেম্বারের কাছে সবসময়ই একটা মাঝারি টাইপের ছোরা থাকে। হাতের বিশেষ কায়দায় ঘরের খিল খুলতে এই ছুরিটার জুড়ি নেই।

পরিচিত অপরিচিত রাজি নিমরাজি কোন ব্যাপারই নয়। বরং অপরিচিত হলেই ভালো। কোন রকমে ঘরে ঢুকে গায়ে হাত দিতে পারলেই বাজিমাত। অনেকেই চিৎকার করে না সম্মানের ভয়ে কেউ বা অনেক আকুতি মিনতি করে আবার কেউ কোন আপত্তিই করে না। যারা খুব বেশি ধস্তাধস্তি করে তাদের জন্য এ ছোরাটা বেশ কাজ দেয়।

হাই স্কুলের জীবন থেকে মেম্বারের এই পথ চলা শুরু হয়েছে। উঠতি বয়সের মেয়েদের ফুঁসলিয়ে সিনেমা দেখাতে নিয়ে যেত। পরের বার সিনেমায় নিয়ে যাবার লোভ দেখিয়ে পরিচিত এক ভাবির বাসায় নিয়ে যেত। ভাবি একা থাকতো তাই কোন অসুবিধা হতো না। ভাবিকে মিষ্টির খরচ হাতে ধরিয়ে দিলেই সব ম্যানেজ হয়ে যেত।

আম্বিয়া বেগমের বাড়ির কাছে চলে এসেছে। আরো সাবধান আরো সন্তর্পণে এগিয়ে চলে মেম্বার। এই শুনশান নিস্তব্ধ রাতে আম্বিয়া বেগমের ঘর ডিম লাইটের মিটমিটে আলো জ্বলে আছে। বেড়ার ছোট ফাঁকে মেম্বার তার চোখ রাখলো। এত রাতে আম্বিয়া বেগম কোন নামাজ পড়ছে? তাহাজ্জুদের সময় এখনো হয়নি। তাহলে এখন কোন নামাজ? মনে মনে খুশি হয় মেম্বার। এমন নামাজি  সতী মহিলাই তো মেম্বার চায়। তার চোখ লোভে ভরে ওঠেছে, জিহ্বা লকলক করছে। অভ্যাসের ডাকে সাড়া দিয়ে হাত চলে যায় কোমড়ে। ছুরিটা বের হয়ে আসে আপন মনেই। পাকা হাতে আস্তে করে ঘরের খিল খুলে ফেলে। আম্বিয়া বেগমকে জড়িয়ে ধরে কাবু করার পজেশন নেয় মেম্বার। মেম্বার লাফিয়ে শরীরের ওপর পড়ার আগেই আম্বিয়া বেগম রুকুতে যায়। অগত্যা নিজেকে সামলে নেয় মেম্বার। অপেক্ষা করে নামাজ শেষ পর্যন্ত।

সালাম ফেরানোর শেষ না হতেই মেম্বার হামলে পড়ে আম্বিয়ার ওপর। আম্বিয়ার হিম শীতল শরীরের স্পর্শে হকচকিয়ে যায় মেম্বার। কত মেয়ে, কত মহিলাকে সে পার করে এসেছে কিন্তু এমন শীতল শরীর কারো পায়নি। নিজেকে সামলে নিতে কিছুটা সময় লাগল তার। স্থির হয়ে উঠতেই জোরে একটা চপেটাঘাত এসে পড়ল মেম্বারের কানের ওপর।  চড়টা এত শক্তিশালী ছিল যে মেম্বার একেবারে দু’হাত দূরে ছিটকে পড়ে গেল মেঝেতে। কানের ভেতর শো শো শব্দ বয়ে যাচ্ছে। কেউ যেন দুরমুশ করে যাচ্ছে তার কানে। কোন মানুষের হাতে এত জোর থাকে ভাবতেই কিছু সময় কেটে যায় তার। মনের কোণে সন্দেহ জেগে ওঠে এ কি মানুষ নাকি জ্বীন পরী? এতদিন সে যাদের ঘরে গেছে তারা নিজেদের বাঁচাতে মরিয়া হয়ে উঠতো। আর সেই রক্ষণাত্বক দৃশ্য মেম্বারকে খুব আনন্দ দিত। যে যত বেশি নিজেকে বাঁচাতে চাইতো তার কাছেই বেশি মজা পেত। যে একেবারে বেশি জোরাজুরি করত এই ছুরিটা তার গলায় ঠেকিয়ে কাবু করে ফেলতো। এই তো মাস তিনেক আগে পাশের বাড়ির পনের ষোল বছরের ভাতিজি নুরীকে সন্ধ্যার পরে বাইরে পেয়েছিল। মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে একটু দূরে এনে তার ওপর হামলে পড়েছিল। কিন্তু নুরী বড় বেশি বাড়াবাড়ি করছিল। ব্যস এই ছুরিটা দিয়ে মাথা কেটে বেল গাছের মাথায় ঝুলিয়ে রেখেছিল। সবাই এটাকে ভুত প্রেতের কাজ বলে ধরে নিয়েছিল। সেই মেম্বার আজ আক্রমনের শিকার হবে এটা ছিল অভাবনীয় অকল্পনীয়।

তড়িৎ গতিতে মেম্বারের হাত চলে যায় কোমড়ে। হ্যা, ছুরিটা জায়গা মতোই আছে। এখন এটাই কাজে লাগাতে হবে। হাতের মুঠোয় ছুরিটা নিয়েই উঠে দাড়াতে চায় মেম্বার। মাথা তুলতেই চোখে পড়ে আম্বিয়া বেগম পাহাড়ের মত শক্ত স্থির অনড় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে তার মাথার সামনে। আম্বিয়া বেগম তো এত লম্বা নয় তবে কে, কে এটা? তার চোখে অগ্নী ঝড়ছে, মুখে তপ্ত মরুর তৃষ্ণা, এলোমেলো রুক্ষ চুল গুলো মেম্বারের আত্নাকে টেনেহিঁচড়ে বের করার জন্য এগিয়ে আসছে। হাতে চকচকে বিশাল এক হেঁসে (হাসুয়া)। সেটা উঁচিয়ে তুলেছে আসমান বরাবর। হয়তো কয়েক ন্যনো সেকেন্ড সময় লাগবে মেম্বারের মুন্ডটাকে আলাদা করতে। আতঙ্কে আর ভয়ে মেম্বারের হাতের মুঠোয় ধরা ছুরিটা গড়িয়ে পড়ে, চোখ বন্ধ করার আগে আম্বিয়ার মুখ অবয়বে ভেসে ওঠে বাড়ির পাশের সেই নুরীর ভয়-ফ্যাকাশে মুখ। চরম প্রতিশোধের কঠিন মুখের আড়ালে মায়ারও একটা ছায়া ফুটে উঠেছে। বাতাসে সাই সাই শব্দে তুলে ধেয়ে আসছে হেঁসেটা।

BAY JUTE LIMITED ADS

বেশ কয়েক সেকেন্ড পর চোখ খুলে মেম্বার। না, সে মরেনি। বেচেই আছে। হেঁসের মাথা বেশ কিছুটা দেবে গেছে মাটির মধ্যে আর গোল অংশের মাঝ খানে মেম্বারের গলাটা এখনও অক্ষত আছে। নিজেকে স্থির করে নেয় সে। হাত দিয়ে হেঁসেটা তুলে দূরে ফেলে দেয়। চৌকির দিকে তাকিয়ে দেখে আম্বিয়া বেগম অঘোরে ঘুমোচ্ছে। এ ঘুম গভীর ঘুম। তার শরীরের কাপড় অবিন্যস্ত। হাটুর ওপরে ওঠে যাওয়া অংশে চোখ পড়ে মেম্বারের। কিন্তু সে দিকে আর লোলুপ দৃষ্টি পড়েনা। কিছুক্ষণ আগে ঘটে যাওয়া ঘটনা তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। আম্বিয়া বেগম যে তাকে কাবু করেনি তা সে নিশ্চিত। তবে কি সেই  নুরী তাকে কোন সংকেত দিয়ে গেল। কি সেই সংকেত?

আম্বিয়া বেগমের নিতম্বের দিকে আর ফিরেও তাকায় না মেম্বার। কালো রাতের মতোই কালো অভ্যাস গুলোকে সে জীবন থেকে বিদায় জানাতে চায়। জীবনের বোনাস পাওয়া এই সময়টুকু আর অন্ধকার নয় বরং আলোতেই কাটিয়ে দিতে চায়। এটা তারই প্রথম পদক্ষেপ।

খুব সাবধানে মেম্বার বেরিয়ে আসে আম্বিয়ার ঘর থেকে। নিকষ কালো আঁধারকে বদরুল মেম্বারের কাছে আজ অন্য রকম লাগছে । তার মনে হচ্ছে সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত যতই গভীর হয় ভোরের আলো ফুটে ওঠার সময় ততই এগিয়ে আসে।

মোঃ এনামুল হক

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here