আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস দিনটিকে মানুষ মনের গভীর থেকে শ্রদ্ধাবোধ নিয়ে উদযাপন করে থাকে। কারণ বাংলাভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করতে গিয়ে অনেক মানুষ প্রাণ দিয়েছিল।
“যারা ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছে তাদের সব সময় মনে রাখতে হবে তাদের জন্য একদিন নয় তাদের জন্য পুরো বছর রাখা উচিত। আজ একুশে ফেব্রুয়ারি, এই দিনে লক্ষ কোটি ভাই বোনদের রক্তের বিনিময়ে আমাদের এই সোনার বাংলা ভাষা । এই দিনটির অপেক্ষায় আমরা কোটি মানুষ লক্ষ ফুল হাজার তোড়া নিয়ে জানাই তাদের শুভেচ্ছা । আমরা তাদের কখনো ভুলবো না ।“
প্রায় দুই হাজার কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত দুটি ভূখণ্ড এবং দুটি ভিন্ন ভাষার জাতিসত্তাকে মিলিয়ে ১৯৪৭ সালে জন্ম হয়েছিল পাকিস্তান রাষ্ট্রের। পশ্চিম পাকিস্তানে উর্দু প্রধান ভাষা হলেও পূর্ব পাকিস্তানের ক্ষেত্রে হল বাংলা। জন্ম থেকেই মাভাষাকে কেন্দ্র করে পূর্ব পাকিস্তান বা বাংলাদেশে সূচনা হয় আন্দোলনের। স্বাধীনতার পর উর্দু ভাষাকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রীয় ভাষা হিসেবে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হলে পূর্ব পাকিস্তানে শুরু হয় প্রতিবাদ। ১৯৫২ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের অন্তর্গত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও সমাজকর্মীরা পাকিস্তান সরকারের ভাষা নীতির বিরোধিতা করেন। আন্দোলনরত ছাত্র ও সমাজ কর্মীদের উপর বর্বর পুলিশ গুলিবর্ষণ করলে রফিক, সালাম, আব্দুল জব্বার, শফিউল, সালাম, বরকত-সহ অনেক তরুণ শহিদ হন। এই দিনটি তাই ভাষা শহিদ দিবস হিসেবেও পরিচিত।
১৯৫৩ সাল থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষাশহিদদের স্মরণে ‘শহিদ দিবস’ রূপে পালিত হয়ে আসছে। কালো পতাকা, প্রভাতফেরি, খালি পায়ে শোভাযাত্রা, শহিদদের কবর ও নিশ্চিহ্ন শহীদ মিনারে ফুল দেওয়া ১৯৫৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকেই শুরু হয়। যেখানেই বাঙালি আছে, সেখানেই একুশে ফেব্রুয়ারি বাঙালির আত্মত্যাগের ও জাগরণের গৌরবময় দিন হিসেবে পালন করা হয়।
কেবল বাংলাদেশ নয়, পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরাতেও এই দিনটি ভাষা শহিদ দিবস হিসাবেই পালিত হয়ে আসছে।
‘মাতৃভাষা – মাতৃদুদ্ধ’ কথাটি জাতি, দেশ, ভাষা নির্বিশেষে প্রতিটি মানুষের কাছে একই রকম সত্য। সেই সত্যকে মান্যতা দিয়েই সাংস্কৃতিক বচিত্র্য ও বহু ভাষাবিশিষ্ট বিশ্বের সকল ভাষাকে সম্মান দিতে ইউনেস্কো (UNESCO) ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে পালন করার সিদ্ধান্ত নেয়।
বাংলাদেশের বাঙালিদের ভাষার প্রতি ভালোবাসা ও আত্মত্যাগকে সম্মান জানিয়ে ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর প্যারিস অধিবেশনে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের বিষয়টি উত্থাপন করা হয়। বিশ্বের দরবারে বাংলা ভাষা লাভ করে বিশেষ মর্যাদা। ঠিক পরের বছর ২০০০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে পৃথিবীর ১৮৮টি দেশে এ দিনটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন শুরু হয়। ২০১০ সালের ২১ অক্টোবর জাতিসংঘের ৬৫তম অধিবেশনে প্রতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের প্রস্তাব আনে বাংলাদেশ, যা সর্বসম্মত ভাবে গৃহীত হয়।
মুক্তিযোদ্ধাদের অক্লান্ত লড়াই ও আত্মত্যাগের পর বাংলাদেশ স্বাধীন হয়, যে দেশের ভিত্তি ছিল বাংলা ভাষা। বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে নতুন বাংলাদেশ শপথ নেয় নিজের মাতৃভাষা বাংলার প্রতি দায়বদ্ধতার কথা মনে রেখে। ইতিহাসের পাতায় শুধু ভাষার জন্য আন্দোলন এবং নতুন দেশের জন্ম— এর দ্বিতীয় কোনও উদাহরণ পাওয়া অসম্ভব।
যুগ যুগ ধরে ভাষা শহীদরা রয়ে যাবে বাঙালির মনে, তাই এই দিনটিতে সবাইকে জানাই একুশে ফেব্রুয়ারির শুভেচ্ছা|
এই একুশ আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো তাই আমি এই ২১ ভুলতে পারিনা!!
যতকাল রবে এই বাংলা রয়ে যাবে সকল ভাষা শহীদদের স্মরণ।
আজ আমরা বাংলা বলতে পারি শুধুমাত্র ভাষা শহীদদের ত্যাগের বিনিময়ে, তাই আমরা তাদের ভুলবো না।
এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বাংলার স্বাধীনতা আনলে যারা আমরা তোমাদের ভুলব না।
লেখক: হেদায়েত উল্লাহ সিদ্দিকী