ফাল্গুনের ভর দুপুরে জানালা গলে রোদ আসে ঘরে। সেই রোদে ওপাশের আম গাছগুলোর ঝেপে আসা বোলের নেশা নেশা সুবাস তেতে থাকে।ঘরময় ভেসে বেড়ায়।বসন্তের কোকিলদের গলায় রাজ্যের জোর…কু কু কু কু করে ডেকেই যাচ্ছে..আচ্ছা,এটাই কি কোকিলের গান? এক শব্দের গান?কি আশ্চর্য!পাখিদের গান আসলে এক শব্দের অথবা ধ্বনির? মানুষের গানগুলো এতো লম্বা কেনো?দূর ছাই!ব্যাঙের মাথা!আম কাঁঠালের আঠার মতো চোখভর্তি ঘুমের আঠা টের পাই।
রোজ ভর দুপুরে গলির রাস্তায় একজন অন্ধ ফকির এসে সুরেলা গলায় গান ধরে।সেই সুরের বিষন্নতায় চোখে জল আসে. পেতে রাখা এলুমিনিয়ামের থালায় টুন করে ফেলা কয়েনের শব্দ গানের সুর থামিয়ে দেয়।শুনশান নিরবতায় একটা সাদা বিড়াল উঁকি দিয়ে চলে যায়। অলস গুটি সুটি পায়ে শোবার জায়গা খুঁজে বেড়ায়। ধুলো জমা কার্নিশে শুকনো পাতা এসে পড়ে।হাত বাড়িয়ে পাতা নেই।তালা চাবিওয়ালা সুর করে ঘুরে বেড়ায়…’এই চাবি বানাই..’
ব্যাস্ত রিকশা টুনটুন শব্দ ভেসে আসে।গাড়ির হর্ণ,হুসহুস করে চলে যাওয়া …
পর্দা টেনে দেই।
ওপাশের বাড়ির ছাদে একটা লাল শাড়ি শুকোতে দেয়া । বাতাসে দোল খায়, রোদে ঝলমল করে। সবুজ পাতার ফাঁকে লাল শাড়িটাকে কেমন আমাদের পতাকার মতো লাগে। এতো ভালো লাগে!মন ভালো হয়ে যায়।
দুপুরের কোমলতা নেই কে বলেছে শুনি ! আছে তো ! এই তো কোমলতা !
এই ছবিটা আগের ভাড়া বাসার পাশের বাড়ির ছাদের।ওখানে রোজ আচারের বয়াম শুকানো হতো।আমি আচার খেতে খুব একটা পছন্দ করি না।কিন্তু আচার খাওয়ার পর হাতভর্তি আচারের গন্ধ শুঁকতে খুব ভালো।শুকাতে দেয়া আচারের বয়াম দেখতেও খুব ভালো লাগে।
মাঝে মাঝে কিছু বিকেলকে মনে হয় আচারের সুবাসমাখা হাতের সুবাসের মতো।গাঢ় গোলাপী ঘাসফুলের মতো। উঁচু দিয়ে উড়ে যাওয়া বাজপাখি অথবা উড়োজাহাজের মতো..
সুখের স্থায়ীত্ব কাল বড্ড হাওয়াই মিঠাই স্বাদের।
ভাল্লাগে না।
ইদানিং একটা বাজপাখি হতে ইচ্ছে করে।কেনো করে জানি না।অথচ বাজপাখি চোখ খুবলে নেয় বলে কোথায় যেনো পড়েছিলাম।
ইচ্ছেগুলোর কোন মাথা মুন্ডু নেই।বাজপাখির ঠোঁট কেমন? নিশ্চয়ই ভয়কংর। চোখ খুবলে নেয়ার মতো ঠোঁট যখন…অজান্তেই নিজের ঠোঁটে হাত চলে যায়।হাসতে হাসতে টিভি দেখি।
এনটিভিতে একটা টেলিফিল্ম হচ্ছে-‘তিন ফোঁটা জল’।কি আশ্চর্য! তিন ফোঁটা কেনো? দুই,চার বা পাঁচ ফোঁটা জল হলে কি ক্ষতি হতো জানার জন্য নাটক দেখছি।
নায়িকা রোমানা ড্রাগ এডিক্টেড।পেথিড্রিন নেয়।এখন তো ইয়াবা টিয়াবার যুগ।পেথিড্রিন যুগ বিশ বছর আগের।নাট্যকাররা কি যে সব করে! অতিরিক্ত হাই থটের নাটকে পেথিড্রিনের মতো নেশা আছে সম্ভবত।তিন ফোঁটা জলের রহস্য দেখতে দেখতে কখন যে গভীর ঘুমে তলিয়ে গেছি..
ঘুম থেকে উঠে দেখি হাট হয়ে থাকা দরজা জানালা দিয়ে পিন পিন করে মশা ঢুকছে।সন্ধ্যার ধোয়া ধোয়া আকাশে সবুজ টিয়া উড়ছে।দূর থেকে কালো বিন্দুর মতো লাগে।গতজন্মের রাইকমলকে খুব মনে পড়ে।
রাইকমলের গল্প আরেকদিন হবে খন।
এখন এককাপ কফি খাওয়ার চাইতে জরুরী কিছু নেই বলে মনে করছি।
এলাম তবে।হাতভর্তি আচারমাখা সুবাসের মতো বিকেলে ভালো থাকুক সবাই।
#এলোমেলো
লেখক: ঊর্মি
অনেক অনেক ভালোবাসা রইলো সকলের জন্য ❤️
দ্যা সেইলর এর পক্ষ থেকে আপনাকে অভিনন্দন|