পর্ব – ৪ ۔ (শেষ পর্ব)
এক সপ্তাহ পরের কথা দারোয়ান সফিক এসেছে , দরজা খুলতেই সফিক এসে বলে “ ম্যডাম আপনার জন্য তাবিজ পড়া আনছি , আর পানি পড়া আনছি এইটা পইড়া থাকবেন , আমারে দেখেন , আমার গলায় একটা , দুই হাতে দুইটা , হুজুরে দিছে, আমগো ম্যডাম রানু আপা মরার পর ছাঁদে যাইতে ভয় পাইতাম , তাই এই ব্যবস্থা , , এটা বলেই সে দাঁত গুলো বের করে হা হা করে হাঁসতে থাকে , রানুর অসহ্য লাগছে তাঁকে , ভারি গলায় সে বলে , এক্ষুনি বের হ আমার সামনে থেকে , তুই আমার সামনে আসবি না “দারোয়ান সফিক রানুর এই রুপ আগে কখন দেখে নাই ,রানু এক ধাক্কায় শফিকের হুজুরের পড়া পানির গ্লাস নিচে ফেলে দেয় , সে ভয়ে চিৎকার করে উঠে আপার জানি কি হইছে , আশেপাশের লোকজন তার চিৎকারে ছুটে আসে , হঠাৎ রানু বলে আপনারা কেন এসেছেন , এখানে এত ভীর কেন ? পাড়া প্রতিবেশীরা বলল আপনি তো দারোয়ান সফিকরে এক্ষুনি মেরে ফেলতেন , সে বুঝতে পারে না , দারোয়ান সফিক ভয়ে ভয়ে বলে ম্যডাম রে জীনে আসর করছে , আমি আর এই বাড়িতে থাক্মু না , রানুর আশ্চর্য লাগে আর মনে মনে বলে কয়েক মিনিটে কিভাবে আমি ভুলে গেলাম আমার এই আচরণ ,
আসিফ আজ তারাতারি অফিস থেকে ফেরে , সব কথা বলে আসিফকে , আসিফ বলে , তোমার আরও বিশ্রাম প্রয়োজন , তুমি বিশ্রামে থাকো ,
আমি ডক্টর সিনহার কে প্রয়োজনে আমি আমার বাসায় ডেকে নিয়ে আসব ,
পরের দিন ছুটির দিন , বাসায় আজ মুরগি পোলাও রান্না করবে কারন ডক্টর সিনহা আসবে তার বাসায় , আবারো হলুদ শাড়ি পড়েছে , সব হলুদ , তার স্বামী আসিফও হলুদ পাঞ্জাবি পড়া , ব্যপারটা তারা খুব এঞ্জয় করে ,
রাতে ডক্টর সিনহা তাদের বাসায় , , সাথে ছিল স্মোক ইলিসের রেসিপি , ডক্টর সিনহার খুব প্রিয় খাবার, রানু বলল স্যার আপনার প্রিয় খাবারটি কিন্তু আজ আমি করেছি , ডক্টর সিনহা অবাক না হয়ে বলে , “স্মোক ইলিসের রেসিপি আমার প্রিয় , সেটা তো তোমাকে কখনই বলিনি” কপাল কুচকে বলল “ ভেরি ইন্টারেস্টিং ,
আসিফও অবাক হয় রানুর কথা শুনে , তবে ডক্টর সিনহা মোটেও অবাক হয় না , রানুকে পাশের ঘরে যেতে বলে তারা ,
আসিফ বলে “স্যার এটার ব্যখ্যা কিভাবে দেবেন ? “ডক্টর সিনহা পকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে বলে , একটু ধরাবো , সমস্যা আছে ? আসিফ বলে , না না কোন সমস্যা নেই স্যার , ডক্টর সিনহা ব্যখ্যা দিতে শুরু করলেন “দেখুন রানুর স্মোক ইলিসের ব্যপারটা মোটেও অস্বাভাবিক কিছু না , বাংলাদেশ ও পৃথিবীর সব বাঙ্গালিরা বেশির ভাগ মানুষ ইলিস মাছের প্রতি দুর্বল ” সেই হিসেবে আমিও ইলিস পছন্দ করি , , এটা কাঁকতলিও ব্যপার মাত্র , মিলে যায় অনেক সময় , আর রানুর ব্যপারটা হচ্ছে, তার অবচেতন মন ব্রেনে ঢুকে গেছে , তার মধ্যে কল্পনা শক্তি কাজ করছে বেশি , আর স্মোক ইলিসের ব্যপারতা , সেটাই ঘটেছে , তার অবচেতন মন খুবই কমন একটা ঘটনাকে নিজের মতো সাজিয়ে নিয়েছে , তার অবচেতন মন কে নিয়ে খেলা করছে তার ব্রেন , রানুর ব্রেন রানুকে বলছে , “ রানু তোমার মধ্যে সুপার ন্যচারাল পাওয়ার কাজ করছে , “ ডক্টর সিনহা বললেন “ এটাই আর কিছুই না” , আসিফ ডক্টর সিনহার কথায় সায় দেয়
পরের দিন সকাল বেলা , আজ রানুকে অসাধারণ সুন্দর লাগছে , একদম দেবীর মতোই সুন্দর দেখাচ্ছে আজ, আসিফ অফিসে চলে গেছে , আসতে দেরি হবে ,
কিন্তু আজ সে কেন অন্যরকম ? সকাল বেলায় সে ফোন করে দারোয়ান শফিক কে, বারবিকিউ করার জন্য মুরগি আনতে বলে ,
সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে , রানুর আজ হাতা কাটা হলুদ ব্লাউজ , ও হলুদ শাড়ি , অপূর্ব সুন্দর কুঁচি করা শাড়িতে, আজ কেন সে সেজেছে এভাবে ? কারন আজ ১৪ ই ফেব্রুয়ারি , ভ্যলেন্তাইন ডে , আসিফকে সারপ্রাইজ দেবে , দারোয়ান শফিক কে নিয়ে ছাঁদে যাবে কারন বারবিকিউ পার্টিতে তার সহযোগিতা দরকার , দারোয়ান শফিক ছাঁদে আসে , রানুর এই রুপ লাবণ্য দেখে তার মনে মনে শয়তান জেগে উঠে , রানু বলে , শফিক ভাই আমাকে কেমন লাগছে ? শফিক ভয় পায় , রানু বলে “ভয়ের কিছু নাই শফিক ভাই , রানুর এই পরিবর্তন দেখে সে আশ্চর্য হয়ে যায় , রানু বলে , শফিক ভাই তোমার এই তাবিজগুলো আমার মোটেও ভাল লাগে না , এগুল খুলে খুব স্মার্ট হয়ে এসো আজ, শফিক এর মাথা খারাপ হয়ে যায় ,তার মাথা কাজ করছে না , সে শুধু ভাবছে তার মনের ভেতর অনেক দিনের লালিত সপ্ন সে পেতে যাচ্ছে , সে আধা ঘণ্টার মধ্যে তার শরীরের সমস্থ তাবিজ গুলো খুলে রেডি হয়ে আসে ,
শফিক রানুর কাছে আসে, রানু এবার ভারি কণ্ঠে বলে উঠে “আমি রানু বলছি ” “আমি রানু বলছি ” “আমি রানু বলছি ” দেখ চিন্তে পারিস কি না আমাকে , আমি সেই রানু , যাকে তুই নষ্ট করতে চেয়েছিলি , মনে করে দেখ , শফিকের সেই দিনের কথা মনে পরে , যখন আগের রানু বই হাতে ছাঁদে বই পরছিল , সেই সময় শফিক এসে তাঁকে কুপ্রস্তাব দেয় , শফিক তার সামনে আসতে থাকে আর সে পিছে যেতে থাকে , এক সময় তাঁকে ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দেয় , কেও কিছু জানার আগে সে ছাঁদ থেকে পালিয়ে যায় , কোন প্রমান না থাকাতে সে আজ মুক্ত ,
শফিক বুঝতে পারে সে ফেঁসে গেছে , এর মধ্যে আসিফ ছাঁদে এসে পরে , সাথে ডক্টর সিনহা , রানু এবার বলে “ডক্টর সিনহা আমি সেই রানু বলছি ” আমি রানু বলছি , আপনাদের আজ এই রানু সকাল থেকে কি ঘটেছে সে কিছুই জানবে না , দারোয়ান শফিক কে সে দূর থেকে বাতাসে তুলে ধরে , আর বলে তোর তাবিজ এর কারনে তোর কাছে আসতে পারি নাই , আজ তোকে কে রক্ষা করবে , দারোয়ান শফিক দেখে সে আকাশে ভেসে আছে , নিচে পরলে নির্ঘাত মৃত্যু , আসিফ ও ডক্টর সিনহা তাঁকে ছেড়ে দিতে বলে , কিন্তু রানু তাঁকে ছারে না , সে বলে “আমি রানু , আমি বিচার চাই” আসিফ ও ডক্টর সিনহার অনুরধে তাঁকে নিচে নামায় রানু , এরপর তার গলা ধরে স্বীকারোক্তি আদায় করে মোবাইলে জবান বন্দি দেয় , সে বলে , রানুকে সে ছাঁদ থেকে ফেলে দিয়েছে , কারন সে বেঁচে থাকলে তার আসল চেহারা সবাই জেনে যাবে
পুলিসকে খবর দেওয়া হয় , আগের রানুর বাবা ও মা কেও খবর দিয়ে আনা হয় , সত্য জেনে তারা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে , রানুর যখন জ্ঞান ফিরে আসে , সে কিছুই বলতে পারে না ,সকাল থেকে ঐদিন রাত পর্যন্ত কি হয়েছে সে কিছুই জানে না , আসিফ তাঁকে পরে বুঝিয়ে বলে , আর এসব শুনে সে অবাক হয়,
, ডক্টর সিনহা এইসবের কোনই ব্যাখ্যা খুজে পায় না , সে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলতে থাকে , সৃষ্টিকর্তা বলে একজন আছেন , যিনি সমস্থ ব্যাখ্যার উরধে , আমরা তো সাধারন মানুষ মাত্র , “প্রকৃতি বড়ই অদ্ভুত , মাঝে মাঝে এমন কোন ঘটনা পৃথিবীতে ঘটে যেগুলোর আসলেও কোন ব্যাখ্যা হয় না , সৃষ্টিকর্তা কাকে কিভাবে ন্যায় বিচার পাইয়ে দেবেন , সেটা আমাদের ধারনারও বাহিরে ,
এরপর থেকে ওই বাসায় আর কোন সমস্যা হয় নাই , রানুর শ্বশুর ও শাশুড়ি এখন রানুর সাথেই থাকে , এক বছর পর তাদের কল জুড়ে এল ফুটফুটে জমজ কন্যা সন্তান , রানু তার সংসারের কাজের ফাকে ফাকে তার প্রিয় উপন্যাস গুলো আবার পড়া শুরু করে ,
Khub bhalo laglo ❤️❤️❤️
Asadharon golpo
ধন্যবাদ