দুর থেকে আঁধার ভেদ করে হেড লাইটের আলো দেখা যাচ্ছে । কুম্ভকর্ণের ঘুম ভেঙ্গে স্টেশনের মাইক সরব হয়ে উঠল। আর অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই রাজশাহী গামী পদ্মা এক্সপ্রেস জয়দেবপুর স্টেশনে প্রবেশ করবে।
আমি গাড়িতে ওঠার প্রস্তুতি নিলাম।
আমার নির্ধারিত আসনে একজন লোক বসে আছে। পাশের সিটে একজন মহিলা তার দু-আড়াই বছরের সন্তান নিয়ে বসে আছে। তারা যে একই ফ্যামিলি তা সহজেই অনুমান করা যাচ্ছে। তাদের সাদামাঠা বেশভূষায় গ্রামীণ চিহ্ন ফুটে উঠেছে। তারা এতক্ষণ যে সিটে বসে আছে সেই সিটে এখন আমাকে বসতে হবে ভাবতেই খারাপ লাগছে। সিট ফাঁকা দেখলেই স্ট্যান্ডিং যাত্রীরা বসার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ে।
কোন রাখ ঢাক না করেই বললাম এটা আমার সিট। আপনি উঠুন।
লোকটি আলাভোলার মত আমার দিকে তাকালো। ইতস্ত স্বরে বলল না এইডিতো আমার সিট।
টানা সুরের কথা শুনেই মনে হলো লোকটা একটা গাইয়া ভূত। এমন গেয়ো মানুষটা আমার সিট দখল করে আছে। আবার সেটা নিজের বলে দাবি করছে। মেজাজটা বিগড়ে যাচ্ছে খুব। তবুও শান্ত ভাবে টিকেট বের করে বললাম এই যে দেখছেন এই কামড়ার এই সিটটা আমার।
এবার লোকটি পরাস্ত সৈনিকের মতো বলল আপা আমিতো ঢাকাত থাইকি টিকিট কাটিচি। এই দুইডি আমার সিট।
আমি বেশ শান্ত গলায় বললাম আপনার সিট হয়তো অন্য কামড়ায় হবে। এখন ঝটপট উঠুন আমাকে বসতে দিন।
আমার কথা শুনে তার চোখে বেশ অসহায়ত্ব ফুটে উঠল। ধীর গলায় বলল আপা আমি সিটের নম্বর দেইখিই বইচি।
লোকটির ওপর বেশ বিরক্ত হলাম। আমার সিটে আমাকে বসতে না দিয়ে সে নানা রকম টালবাহানা শুরু করেছে। গলার স্বরটা একটু কড়া করে বললাম আপনি আমার সিট থেকে উঠবেন নাকি এটেনডেন্ট ডাকব?
লোকটির চোখে মুখে সিট হারানোর শঙ্কা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। একজন রাজার চোখে রাজ্য হারিয়ে যেতে বসলেও এমন শঙ্কা প্রকাশ পায়না। আকুতি মেশানো গলায় সে বলল আপা এইডি আমারই সিট আপনে এটেন না কি কইলেন তাকই ডাক দ্যান।
সময় গড়িয়ে যাচ্ছে। একটা লম্বা হুইসেল দিয়ে ট্রেন চলতে শুরু করেছে অনেক আগেই। এতক্ষণ পাশের যাত্রীরা উৎসুক চোখে সব দেখছিল। একজন যাত্রী উঠে এসে লোকটির টিকেট নিয়ে ভাল করে দেখল। তার সিটে কোন সমস্যা নেই। আমার টিকেটও দেখল। আমার আসন নম্বরটাও ঠিক আছে। আমার সিটের প্যাচ খুলতে এসে সে নিজেই প্যাচে পড়ে গেল। অন্যান্য যাত্রীরা এটা নিয়ে গবেষণা শুরু করল। তারা সবাই রেলওয়ের টিকেট সিষ্টেম আর অফিসারদের দূর্নীতি নিয়ে আলোচনার ঝড় তুলল। এরই মধ্যে কেউ একজন এটেনডেন্টকে ডেকে আনলেন। এটেনডেন্ট আমার টিকেট দেখে বলল ম্যাম আপনার কোচ ও সিট নম্বর ঠিক আছে তবে তারিখটা গতকালের। অর্থাৎ রাত বারোটার পরে তারিখ চেঞ্জ হয়ে গেছে। আপনার টিকেটের ভ্রমণ তারিখ গতকাল ছিল। আপনার গাড়ি কাল চলে গেছে। এক্ষেত্রে সিটে যিনি বসে আছেন তিনিই ঐ সিটে বসে যাবেন।
তারিখটা ভাল করে খেয়াল করে দেখলাম আজ রাত বারোটার পরে তের তারিখ হয়ে গেছে। আমার টিকেটে বারো তারিখ লেখা আছে। ট্রেনটি ঢাকা থেকে বারো তারিখেই ছেড়েছে কিন্তু জয়দেবপুর এসে তের তারিখে ইন করেছে। খুব সহজে বুঝে নিলাম এ সিট আমার নয়। এতক্ষণ যারা রেলওয়ের গুষ্ঠি উদ্ধার করছিলেন তারা সবাই চুপ হয়ে গেছে। তারিখের দিকে লক্ষ্য করতে পারেনি ভেবে কেউ কেউ আক্ষেপ করল। সবাই যে যার সিটে বসে চোখ বন্ধ করে ঘুমের ভান ধরেছে। ভদ্র মহিলা ভেবে পাছে কাউকে বদান্যতা দেখিয়ে সিট ছেড়ে দিতে হয় এই ভয়ে। নিজেকে মনে মনে বেশ ধিক্কার দিলাম। একজন গ্রাম্য সহজ সরল লোককে শুধু শুধু হেনস্থা করছিলাম।
রাতের বেলা ষ্ট্যান্ডিং জার্নি করব কেমন করে এমন হিমশীতল ভাবনায় তলিয়ে যাচ্ছি। সিটের সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে ক্লান্তি দুর করার ব্যর্থ চেষ্টা করছি। রাতের আঁধার আর শূণ্যতা ভেদ করে সাই সাই শব্দে তালে তাল মিলিয়ে রেল গাড়িটা তার যাত্রীর গন্তব্যের অভিমুখে ছুটে চলেছে। মাঝে মাঝে দূরের মাঠ পেরিয়ে ঝাপসা বিদ্যুতের আলো চোখে পড়ছে। লোকো মাষ্টার তাদের ঘুম ঘুম ভাব কাটানোর জন্য মাঝে মাঝে হুইসেল বাজিয়ে নিজেদের চাঙ্গা করে নিচ্ছেন।
একটু পরে লোকটি ও তার স্ত্রীর ফিসফিসানির দিকে আমার কান আটকে গেল।
স্ত্রীঃ আপনি একটু উইটি উনারে বসতে দ্যান।
লোকঃ উনি কি তুমার পাশে বসপিনি।
স্ত্রীঃ সে দাঁড়া থাইকি কষ্ট করতিছে। বসতে কইলে বসপি না ক্যা?
বেশ অনুনুয়ের সাথে লোকটি তার সিটটি ছেড়ে দিয়ে আমাকে বসতে বলল। আমি সিটটাতে বসবো কিনা এ নিয়ে তার চোখে বেশ সন্দেহের ছাপ ফুটে উঠেছে। আশেপাশের সব প্যান্ট শার্ট পড়া শহুরে যাত্রীরা চোখ বুজে ঘাপটি মেরে রয়েছে অথচ যাকে আমি গাইয়া ভূত মনে করছি সে তার সিট অনুনয়ের সঙ্গে ছেড়ে দিচ্ছে এবং আমি সেটাতে বসলেই তার সন্দিহান চোখ দুটো আনন্দে ভরে ওঠার অপেক্ষা করছে। সব যাত্রীরা যখন সিট ছেড়ে দেয়ার আতঙ্কে কথিত ঘুমে অচেতন তখন একটি পরিবারের চোখ সিটে বসতে দিয়ে আনন্দ নিতে অপেক্ষমান। তথাকথিত ভদ্র যাত্রীদের সাথে এই গ্রামীণ পরিবারের পার্থক্যটা একদম স্পষ্ট। সিটে বসতে বসতে মনে মনে বললাম গাইয়া ভূত বলেই নিজের সিটে ছেড়ে আমাকে বসার জায়গা করে দিল। আর যারা স্মার্ট শহুরে তারা সবাই না দেখা না বোঝার ভান করে চোখ বুজে আছে।
আমি নুর এ জান্নাত মনি। মানবাধিকার সংগঠনে কাজ করি। অনির্ধারিত একটা প্রোগ্রামে রাজশাহী অঞ্চলের একটি পাড়াগায়ে যেতে হবে। অনেক দিন দাদুর সাথে সাক্ষাৎ নেই তাই আমি টিম মেট ছাড়াই একদিন আগেই রওনা দিয়েছি। হাজবেন্ডের অফিসের পাশেই রেল স্টেশন। তাই তাকে হাতে হাতে টিকেট কেটে আনতে বলেছিলাম। সে পিয়নকে পাঠিয়ে টিকেট কেটেছে। আর তাইতো এমন তারিখের বিভ্রাট ঘটেছে।
শেষ পর্যন্ত বসতে পেরে অনেক ভাল লাগছে। চোখ দুটো বন্ধ করে একটু বিশ্রাম নিচ্ছি। অল্প কিছুক্ষণ পরপর লোকটি এসে তার স্ত্রী সন্তানের খবর নিচ্ছে। মেয়ে ঠিক মত ঘুমুচ্ছে কিনা তার স্ত্রী বাইরে (ওয়াশে) যাবে কিনা। মহিলার কোলে মেয়েটা মাঝে মধ্যেই ফ..তে..না ফ..তে..না বলে চিৎকার করে আবার ঘুমিয়ে পড়ছে। মেয়েটি যতবারই চিৎকার করছে মহিলা ততবারই হাসি মুখে তাকে আদর করে বুকে জড়িয়ে ধরছে। একটু বিশ্রামের মধ্যে এমন আদেখ্যিতা আমার খুব বিরক্ত লাগছিল। নিশুতি রাতের নিরবতা ভেঙ্গে ট্রেন এগিয়ে চলেছে। একসময় আমরা যমুনা সেতু পূর্ব স্টশনে পৌঁছালাম। লোকটি স্ত্রীর জন্য কলা ডিম ব্রেড সহ বেশ কিছু খাবার কিনে আনলো। মেয়ের জন্য চিপস, জুস। সাথে দু’প্যাকেট অল টাইম কেকও এনেছে। ফিসফিস করে স্ত্রীকে বলছে এই আপা তো কিছু খাইলো না। এইডা একটা তুমি খাও একটা আপাক দ্যাও।
আপা দামী মানুষ এই কেক খাবি নানে। এইডা রাইকি দেই।
হ ঠিক কইচো সে আবার রাগও করতে পারে। তুমার কাছে রাইকি দ্যাও। সেইডিই ভাল হবিনি।
কোলের মেয়েটার ঘুম থেকে জেগে উঠেছে। ফতেনা কই ফতেনা কই বলে চঞ্চল হয়ে উঠলো। আমি চোখ তুলে তাকালাম। মেয়েটির গায়ের রং ফর্সা। বেশ টানা টানা চোখ। নাদুসনুদুস চেহারা। দেখলেই কোলে নিতে ইচ্ছে করবে এমন তার গঠন। আমি কৌতুহল নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম আপনার মেয়ে ফতেনা ফতেনা বলছে কেন?
ওর দাদীর নাম ফাতেমা। সারাক্ষণ ওর দাদীর সাথে আঠার মত লাইগি থাকে। আদর আবদার মান অভিমান সব ওর দাদীর কাছে। দাদী ডাক ছাড়াও ফতেনা ডাক ওর দাদী বেশ পছন্দ করে। মেয়েটা যখন চিকন গলায় জোরে জোরে ফতেনা ফতেনা করে ডাকে তখন সারা বাড়ি আনন্দে ভইরি ওঠে। তাই খেলার মাঝে ওর দাদী দারজার পাল্লার ওতে লুকায়ে থাকে। ও যখন চোখের সামনে দাদীকে খুইজি না পায় তখন ফতেনা ফতেনা বলে ডাইকি ওঠে। দুই দাদী নাতনীর এইরম কারবার দেখতে আশেপাশের বাড়ির মানুষও ছুইটি আসে। কথা গুলো বলার সময় মহিলার চোখ মুখ আনন্দে নেচে উঠছিল।
তাহলে তো ওর দাদী ওকে খুব ভালবাসে।
হ্যা, সারাদিন আমি বাড়িতে কাজের মধ্যি থাকি। ওর দাদীই ওর দেখা শুনা করে। দুপুরে খাবার সময় ওর দাদী আমাদের ভাত বাইড়ি খাওয়ায়। আমরা সবাই একসাথে খানা খাই। আমাদের খানা খাওয়ার সুময়টাও খুব আনন্দে কাটে।
মহিলার সংক্ষিপ্ত রোজনামচায়ে আমি অভিভূত হয়ে পড়লাম। এতক্ষণ যাদের আমি বিরক্ত মনে করছি সেই গাইয়া ভূতের যাপিত জীবন সত্যিই সুখের এবং তাতে আসল সংসার সুখ লুকিয়ে আছে। তাদের দেখে নিজের অজান্তেই মনের ভেতর একটা না পাওয়ার বেদনা অনুভব করছি। কেন যেন এই গাইয়া মানুষের জীবনের সাথে আমার জীবনকে তুলনা করতে ইচ্ছে করছে। আবার সে ইচ্ছে থেকে পালিয়েও আসতে ইচ্ছে করছে। কারণ সেই তুলনার মাপকাঠিতে যে আমি হেরে যাব বারবার। কে চায় নিজের নিশ্চিত হার মানা খেলায় মত্ত হতে?
আমার শ্বাশুড়ি দু’দিন আমার বাসায় গেলেই আমার ছেলে মেয়েরা বিরক্ত হয়ে যায়। দাদী মানে নিয়মিত মানুষের চেয়ে অতিরিক্ত একজন মানুষ, অন্য একজন মানুষ। আপন মানুষ বলে তারা মনেই করতে পারে না।ফ্ল্যাট বাসায় রুটিন বাধা জীবনে অন্যের উপস্থিতি উটকো ঝামেলা আর উৎপাতের মতোই মনে করে। তাছাড়া শহুরে বন্দী জীবনের আবহাওয়ায় শ্বাশুড়িও হাঁফিয়ে ওঠেন। তাইতো তার ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বেশি দিন থাকতে পারেন না। সব মিলিয়ে আমার ছেলে মেয়েরা মুরুব্বিদের এমন আদর থেকে বঞ্চিত হয়ে চলেছে প্রতিদিন। যে প্রজন্ম মা বাবা ছাড়া অন্য আপন আত্নীয়দের নিজের করে ভাবতে পারে না তাদের উত্তরসুরিরা যে কেমন হবে তা অনুমান করাই যায়।
আমরা দু’জনেই চাকরি করি। নিজেদের ভাল অবস্থান আর ছেলে মেয়েদের ভাল স্কুল লেখাপড়া মানুষের মত মানুষ করার জন্য। কিন্তু এমন ভাল থাকতে গিয়ে জীবনটা একটু একটু করে কখন যে যান্ত্রিক হয়ে গেছে তা বুঝতে পারিনি। আপনজনদের আপন করে ধরে রাখতে পারিনি। আত্ব-কেন্দ্রিক হয়ে উঠেছি সবক্ষেত্রে। ছিটকে পড়েছি সব মায়ার বাঁধন থেকে। আসলে আমাদের জীবন সংসার চলছে একটা কন্ট্র্যাক্টের মত করে। প্রাইভেসির অজুহাতে আমরা দু’জন দু’জনের ব্যাপারে জানতে চাই না। ব্যক্তিগত স্বাধীনতার দেয়ালে ঢাকা পড়ে যায় অনেক মায়া, প্রেম, ভালবাসা। বিছানায় আমাদের ভূমিকা শুধু কর্তব্যের বেড়াজালে বাধা। ছুটির দিনগুলোতে ভাল কোন রেষ্টুরেন্টে যাওয়া কোথাও ঘুরতে বেরুনো শুধু সামাজিকতা আর শো’ডাউনের বহিঃপ্রকাশ। ট্রেনের একটা টিকেট কাটাও শুধু নিয়ম পালন করা মাত্র। সেখানে নেই কোন যত্ন নেই কোন ভালবাসার ছোঁয়া। শুধুই নিয়ম রক্ষার ব্যাপার। আর তাইতো তারিখ বিভ্রাটের মত ভুলের খাতায় যুক্ত হয় হাজারো ঘটনা।
আজ অজঅজ পাড়া গায়ের এই লোকটি বা তার পরিবার জানেনা রেষ্টুরেন্টে যাওয়া কি? বাইরে কোথাও বেড়াতে যাওয়ার প্রয়োজনই বা কি? টেক কেয়ার শব্দটা হয়তো শোনেও নি কখনো। তবুও স্ত্রী সন্তানের খোঁজ নিতে বারবারই সিটের পাশে ছুটে এসেছে। খাবার দিকে লক্ষ্য রাখা ওয়াশ রুমে যাবার প্রয়োজনীয়তা ভাল মন্দ সব খবর রাখা যে একজন আদর্শ স্বামীর কর্তব্য তা বোধকরি সে আমাদের মত বইয়ের পাতায় পড়ে শেখেনি। তারপরেও এই গাইয়া লোকটার চারপাশটা প্রকৃত ভালবাসার ডানাগুলো ছায়ার মত ঘিরে আছে। জীবনের লম্বা জার্নিতে ছোট্ট এই ট্রেন যাত্রায় গাইয়া পরিবারটির মাঝে সুখী আর সুন্দর সামাজিকতার ছোঁয়া আমাকে মুগ্ধ করে চলেছে প্রতিনিয়ত।
রাত গভীর হয়ে ধীরে ধীরে ভোরের দিকে এগিয়ে চলেছে। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে আমাদের ট্রেন ছুটে চলেছে অবিরাম। চাটমোহর রেল স্টেশন ছাড়লাম সামনেই ঈশ্বরদী বাইপাস স্টেশন। এই পরিবারটা ওখানেই নেমে যাবে। আর কখনো তাদের সাথে হয়তো দেখা হবেনা।
এ যাত্রায় আমার জন্য তারা শুধু সেক্রিফাইস করেই গেল। আর আমি শুধু গ্রহনই করে গেলাম। তাদের কিছু দিতে পারলাম না।
অনেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছে ঈশ্বরদী বাইপাস স্টেশনে নামার জন্য।লোকটিও এগিয়ে আসছে। এখনি তার স্ত্রী সন্তানকে নিয়ে এগিয়ে যাবেন দরজার দিকে।
ঠোঁটের কোণায় একটু খানি কৃত্রিম হাসি টেনে মহিলাকে বললাম আপনারা তো আমাকে দেবার জন্য একটা কেক এনেছিলেন সেটা আমাকে না দিয়েই চলে যাবেন।
আমি যে তার কাছে চাইতে পারি সেটা তার ধারণার বাইরে ছিল।আমার কথা শুনে মহিলাটা যেন আকাশ থেকে পড়লো। তার মুখে বাঁধ ভাঙা উচ্ছাস ফুটে উঠল। ওমা তাই আপনি লিবেন।
স্বামীর দিকে তাকিয়ে বলল দ্যাকেন দ্যাকেন আপা আপনার আনা কেকটা লিবি। আপা আসলেই খুব ভাল মানুষ।
বেচারা স্বামীর মুখেও একটা লাজুক হাসি ফুটে উঠল। ছোট্ট মেয়েটার হাতে কেক দিয়ে বলল আম্মুনি আন্টিক এই কেক দ্যাও তো।
ছোট্ট শিশু কি বুঝলো কে জানে। ভুবন ভোলা এক টুকরো হাসি ফুটে উঠল তার মুখে। এ হাসি নিশ্চয়ই বেহেস্তি হাসি। ছোট্ট সোনার হাত থেকে কেক নেয়াটা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ট্রফি গ্রহনের মত মনে হলো। সামান্য এই উপহার গ্রহণ করার মূহুর্তটি লোকটির পরিবারের জন্য একটা সুখের স্মৃতি হয়ে থাকবে নিশ্চয়ই। আর ট্রফিটা আমার শো’কেসে একটি সুন্দর পরিপূর্ণ ও শ্রেষ্ঠ পরিবারের প্রতীক হয়ে থাকবে।
মোঃ এনামুল হক