পারিবারিক আদালতে কখন যাবেন

0
220
When to go to family court

নিচের পাঁচটি বিষয়ের মধ্যে এক বা একাধিক বিষয়ে আপনার সমস্যা হলে পারিবারিক আদালতে যাওয়া উচিত।

১. বিবাহ বিচ্ছেদ।
২. দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধার।
৩. মোহরানা।
৪. ভরণপোষণ।
৫.অভিভাবকত্ব এবং শিশুদের হেফাজত।

আইনজীবীর মাধ্যমে আরজি করে মামলা করতে হবে।
নির্ধারিত কোর্ট ফি দিতে হবে।
বিবাদী অবশ্যই সমন ও নোটিশ পাওয়ার পর লিখিত জবাবের তারিখ পাবেন। উল্লেখিত তারিখে জবাব দিতে ব্যার্থ হলে অতিরিক্ত ২১ দিন সময় পাবে । পারিবারিক আদালতের রায় ,ডিক্রি , আদেশের বিরুদ্ধে জেলা জজ বরাবর ৩০ দিনের মধ্যে আপীল করা যাবে।৩০ দিনের সময় অতিবাহিত হলেও আপীল মন্জুর হতে পারে যদি আপীল আদালত সন্তুষ্ট হন।

পারিবারিক আদালতের এখতিয়ার নিচে আলোচনা করা হলো

১. বিবাহ বিচ্ছেদ Dissolution of Marriage :-
মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ, ১৯৬১ এর ৭ ধারা অনুযায়ী কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীকে তালাক দিতে চাইলে যেকোন পদ্ধতিতে তালাক ঘোষণার পর সাথে সাথে চেয়ারম্যানকে লিখিতভাবে নোটিশ দিতে হবে। তালাকের নোটিশের একটি কপি স্ত্রীকেও প্রদান করতে হবে। তারপর চেয়ারম্যান উক্ত নোটিশ পাবার ৩০ দিনের মাথায় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে আপোষ-মীমাংসার লক্ষ্যে সালিশী পরিষদ গঠন করবেন। যদি সালিসী ট্রাইব্যুনাল স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে একটি সৌহার্দ্যপূর্ণ মীমাংসা করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে চেয়ারম্যানকে নোটিশ দেওয়ার তারিখ থেকে ৯০ দিন পর তালাক কার্যকর হবে।
পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ, ১৯৮৫ এর ৫ ধারা অনুযায়ী পারিবারিক আদালতে বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য মামলা দায়ের করা যাবে। এই আইনের ৫ ধারাতে বলা আছে মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ, ১৯৬১ এর বিধানাবলী সাপেক্ষে বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য পারিবারিক আদালতে মামলা দায়ের করা যাবে। তার মানে ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ অনুযায়ী চেয়ারম্যান নোটিশের মাধ্যমেও বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটানো যাবে।

২. দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধার Restitution of Conjugal Rights :-
স্বামী-স্ত্রী উভয়ই দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধারের মামলা দায়ের করতে পারে।কোন বৈধ কারণ ছাড়া বিবাহের কোন পক্ষ যদি নিজেদেরকে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে পরিচয় দিতে অস্বীকার করে অথবা বৈবাহিক দায়িত্ব পালন করতে অবহেলা প্রদর্শন করে তাহলে সংক্ষুব্ধ পক্ষ পারিবারিক আদালতে দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধারের মামলা দায়ের করতে পারবে।পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ, ১৯৮৫ এর ২২ ধারা অনুযায়ী পারিবারিক আদালতে মামলা দায়ের করতে হলে কোর্ট ফি ২৫ টাকা দিতে হবে।সে অনুযায়ী দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধারের মামলায় কোর্ট ২৫ টাকা হওয়ার কথা।কিন্তু বাস্তবে দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধারের মামলায় ৩০০ টাকা কোর্ট ফি দিতে হয়।কারণ এই ধরনের মামলা এক প্রকার ঘোষণা প্রকৃতির মামলা।আদালত এই মর্মে ঘোষণা প্রদান করেন যে স্বামী যেহেতু স্ত্রীর প্রতি অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করে যাচ্ছে সেহেতু স্ত্রী স্বামীর সাথে বসবাস করবে।আর আমরা জানি ঘোষণামূলক মামলার কোর্ট ফি ৩০০ টাকা।

৩. দেনমোহর/মোহরানা  Dower :-
দেনমোহর স্ত্রী মাফ করে দিলেও স্বামী স্ত্রীকে দেনমোহর পরিশোধ করতে বাধ্য। দেনমোহর প্রকৃতপক্ষে ঋণের সমতুল্য। স্বামীর মৃত্যুতে দেনমোহর অনাদায়ের স্ত্রীর অধিকার রহিত হয় না। স্বামী জীবিত থাকা অবস্থায় স্ত্রীর মৃত্যু হলে স্ত্রীর ছেলেমেয়ে ঐ দেনমোহর পিতার নিকট থেকে আদায় করে নিতে পারবেন। তবে সেটা স্ত্রীর মৃত্যুর ৩ বছরের মধ্যে আদায় করতে হবে।

৪. ভরণপোষণ Maintenance :-
মুসলিম বিবাহবিচ্ছেদ আইন, ১৯৩৯ এর ধারা ২(b) অনুসারে, স্বামী যদি তার স্ত্রীকে ২ বছরের জন্য ভরণপোষণ দিতে অবহেলা করেন বা ২ বছর ধরে তার স্ত্রীকে ভরণপোষণ দিতে ব্যর্থ হন, তাহলে স্ত্রী পরিবারে বিবাহবিচ্ছেদের মামলা করতে পারেন। আদালত একইভাবে স্বামীকে ভরণপোষণ প্রদানে বাধ্য করতে পারবে। একজন পুরুষ তার স্ত্রীর পাশাপাশি সন্তানকেও ভরণপোষণ দিতে বাধ্য। ছেলে সন্তানকে বয়োপ্রাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত এবং মেয়ে সন্তান হলে বিবাহের আগ পর্যন্ত ভরনপোষণ দিতে হবে।
পিতা-মাতার ভরণপোষণ আইন, ২০১৩ এর ধারা ৩ অনুযায়ী প্রত্যেক সন্তান তার পিতা-মাতার ভরণপোষণ নিশ্চিত করবে। পিতা-মাতার ভরণপোষণ নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হলে পিতা-মাতার ভরণপোষণ আইন, ২০১৩ এর ৫ ধারা অনুযায়ী অপরাধ বলে গণ্য হবে এবং উক্ত অপরাধের জন্য অনধিক ১ লক্ষ টাকা অর্থদন্ডে দন্ডিত হবে। উক্ত অর্থদন্ড অনাদায়ে অনধিক ৩ মাস কারাদন্ডে দন্ডিত হবে।

৫. শিশু সন্তানের অভিভাবকত্ব ও তত্ত্বাবধান Guardianship and Custody of Childern :-
সন্তানের অভিভাবক সবসময় পিতা তবে ৭ বছর পর্যন্ত পুত্র সন্তানের হেফাজত মায়ের নিকট আদালত প্রদান করতে পারেন।কন্যা সন্তানের ক্ষেত্রে আট বছর অথবা কন্যা সন্তানের বিবাহের পূর্ব পর্যন্ত মায়ের হেফাজতে দিতে পারেন। সন্তানের হেফাজত সবসময় সন্তানের কল্যানের উপর নির্ভর করে। যার কাছে থাকলে কল্যান হবে তার হেফাজতে আদালত শিশু সন্তান কে প্রেরন করেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here