আমি রানু বলছি কলমে মোহাম্মদ সোহেল রানা

2
203

পর্ব – ৪ ۔ (শেষ পর্ব)

এক সপ্তাহ পরের কথা দারোয়ান সফিক এসেছে , দরজা খুলতেই সফিক এসে বলে “ ম্যডাম আপনার জন্য তাবিজ পড়া আনছি , আর পানি পড়া আনছি এইটা পইড়া থাকবেন , আমারে দেখেন , আমার গলায় একটা , দুই হাতে দুইটা , হুজুরে দিছে, আমগো ম্যডাম রানু আপা মরার পর ছাঁদে যাইতে ভয় পাইতাম , তাই এই ব্যবস্থা , , এটা বলেই সে দাঁত গুলো বের করে হা হা করে হাঁসতে থাকে , রানুর অসহ্য লাগছে তাঁকে , ভারি গলায় সে বলে , এক্ষুনি বের হ আমার সামনে থেকে , তুই আমার সামনে আসবি না “দারোয়ান সফিক রানুর এই রুপ আগে কখন দেখে  নাই ,রানু এক ধাক্কায় শফিকের হুজুরের পড়া পানির গ্লাস নিচে ফেলে দেয় ,  সে ভয়ে চিৎকার করে উঠে আপার জানি কি হইছে , আশেপাশের লোকজন তার চিৎকারে ছুটে আসে ,  হঠাৎ রানু বলে আপনারা কেন এসেছেন , এখানে এত ভীর কেন ?  পাড়া প্রতিবেশীরা বলল আপনি তো দারোয়ান সফিকরে এক্ষুনি  মেরে ফেলতেন , সে বুঝতে পারে না , দারোয়ান সফিক ভয়ে ভয়ে বলে ম্যডাম রে জীনে আসর করছে , আমি আর এই বাড়িতে থাক্মু না ,  রানুর আশ্চর্য লাগে আর মনে মনে বলে কয়েক মিনিটে কিভাবে আমি ভুলে গেলাম আমার এই আচরণ ,

আসিফ আজ তারাতারি অফিস থেকে ফেরে , সব কথা বলে আসিফকে , আসিফ বলে , তোমার আরও বিশ্রাম প্রয়োজন , তুমি বিশ্রামে থাকো ,

আমি ডক্টর সিনহার কে প্রয়োজনে আমি আমার বাসায় ডেকে নিয়ে আসব ,

পরের দিন  ছুটির দিন , বাসায় আজ মুরগি পোলাও রান্না করবে কারন  ডক্টর সিনহা আসবে তার বাসায়  ,   আবারো হলুদ শাড়ি পড়েছে , সব হলুদ , তার স্বামী আসিফও হলুদ পাঞ্জাবি পড়া , ব্যপারটা তারা খুব  এঞ্জয় করে ,

রাতে ডক্টর সিনহা তাদের বাসায় , ,  সাথে ছিল স্মোক ইলিসের রেসিপি , ডক্টর সিনহার খুব প্রিয় খাবার,  রানু বলল স্যার আপনার প্রিয় খাবারটি কিন্তু আজ আমি করেছি ,  ডক্টর সিনহা  অবাক না হয়ে বলে , “স্মোক ইলিসের রেসিপি আমার প্রিয় , সেটা তো তোমাকে কখনই বলিনি” কপাল কুচকে বলল  “ ভেরি ইন্টারেস্টিং ,

আসিফও অবাক হয় রানুর কথা শুনে  , তবে ডক্টর সিনহা মোটেও অবাক হয় না , রানুকে পাশের ঘরে যেতে বলে তারা  ,

আসিফ বলে “স্যার এটার ব্যখ্যা কিভাবে দেবেন ?  “ডক্টর সিনহা পকেট  থেকে একটা সিগারেট বের করে বলে , একটু ধরাবো , সমস্যা আছে ? আসিফ বলে , না না কোন সমস্যা নেই স্যার  , ডক্টর সিনহা ব্যখ্যা  দিতে শুরু করলেন “দেখুন রানুর স্মোক ইলিসের ব্যপারটা মোটেও অস্বাভাবিক কিছু না , বাংলাদেশ ও পৃথিবীর সব বাঙ্গালিরা বেশির ভাগ মানুষ ইলিস মাছের প্রতি দুর্বল  ” সেই হিসেবে  আমিও  ইলিস পছন্দ করি ,  , এটা কাঁকতলিও ব্যপার মাত্র  , মিলে যায় অনেক সময় , আর রানুর ব্যপারটা হচ্ছে,  তার অবচেতন মন ব্রেনে ঢুকে গেছে , তার মধ্যে কল্পনা শক্তি কাজ করছে বেশি , আর স্মোক ইলিসের ব্যপারতা ,  সেটাই ঘটেছে , তার অবচেতন মন খুবই কমন একটা ঘটনাকে নিজের মতো সাজিয়ে নিয়েছে , তার অবচেতন মন কে নিয়ে খেলা করছে তার ব্রেন , রানুর  ব্রেন রানুকে বলছে , “ রানু তোমার মধ্যে সুপার ন্যচারাল পাওয়ার কাজ করছে , “     ডক্টর  সিনহা  বললেন “ এটাই আর কিছুই না”   , আসিফ ডক্টর সিনহার কথায় সায় দেয়

পরের দিন সকাল বেলা , আজ রানুকে অসাধারণ সুন্দর লাগছে , একদম দেবীর মতোই সুন্দর দেখাচ্ছে আজ, আসিফ অফিসে চলে গেছে , আসতে দেরি হবে ,

কিন্তু আজ সে কেন  অন্যরকম ?  সকাল বেলায় সে ফোন করে দারোয়ান শফিক কে,  বারবিকিউ করার জন্য মুরগি আনতে  বলে ,

সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে , রানুর আজ হাতা কাটা হলুদ  ব্লাউজ , ও হলুদ শাড়ি  , অপূর্ব সুন্দর কুঁচি  করা শাড়িতে,  আজ কেন সে সেজেছে এভাবে ? কারন আজ ১৪ ই ফেব্রুয়ারি , ভ্যলেন্তাইন ডে , আসিফকে সারপ্রাইজ দেবে ,  দারোয়ান শফিক কে নিয়ে ছাঁদে যাবে কারন বারবিকিউ পার্টিতে তার সহযোগিতা দরকার , দারোয়ান শফিক ছাঁদে আসে , রানুর এই রুপ লাবণ্য দেখে তার মনে মনে শয়তান জেগে উঠে , রানু বলে , শফিক ভাই আমাকে কেমন লাগছে ? শফিক ভয় পায় ,  রানু বলে “ভয়ের কিছু নাই শফিক ভাই  , রানুর এই পরিবর্তন দেখে সে আশ্চর্য হয়ে যায় , রানু বলে ,  শফিক ভাই তোমার এই তাবিজগুলো আমার মোটেও ভাল লাগে না , এগুল খুলে খুব স্মার্ট হয়ে এসো আজ, শফিক এর মাথা খারাপ হয়ে যায় ,তার মাথা কাজ করছে না , সে শুধু ভাবছে তার মনের ভেতর অনেক দিনের লালিত সপ্ন সে পেতে যাচ্ছে ,  সে আধা ঘণ্টার মধ্যে তার শরীরের সমস্থ তাবিজ গুলো খুলে রেডি হয়ে আসে ,

শফিক রানুর কাছে আসে, রানু এবার ভারি কণ্ঠে  বলে উঠে “আমি রানু বলছি ” “আমি রানু বলছি ” “আমি রানু বলছি ” দেখ চিন্তে পারিস কি না আমাকে , আমি সেই রানু , যাকে তুই নষ্ট করতে চেয়েছিলি ,  মনে করে দেখ ,    শফিকের সেই দিনের কথা মনে পরে , যখন আগের রানু বই হাতে ছাঁদে বই পরছিল  , সেই সময় শফিক এসে তাঁকে কুপ্রস্তাব দেয় , শফিক তার সামনে আসতে থাকে আর সে পিছে যেতে থাকে ,  এক সময় তাঁকে ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে  ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দেয়  , কেও কিছু জানার আগে সে ছাঁদ থেকে পালিয়ে যায়  , কোন প্রমান না থাকাতে সে আজ মুক্ত ,

শফিক বুঝতে পারে সে ফেঁসে গেছে , এর মধ্যে আসিফ ছাঁদে এসে পরে , সাথে ডক্টর সিনহা , রানু এবার বলে “ডক্টর সিনহা আমি সেই রানু বলছি ” আমি রানু বলছি , আপনাদের আজ এই রানু সকাল থেকে কি ঘটেছে সে কিছুই জানবে না , দারোয়ান শফিক কে সে দূর থেকে বাতাসে তুলে ধরে , আর বলে তোর তাবিজ এর কারনে তোর কাছে আসতে পারি নাই , আজ তোকে কে রক্ষা করবে , দারোয়ান শফিক দেখে সে আকাশে ভেসে আছে , নিচে পরলে নির্ঘাত মৃত্যু  , আসিফ ও ডক্টর সিনহা তাঁকে ছেড়ে দিতে বলে , কিন্তু রানু তাঁকে ছারে না , সে বলে “আমি রানু ,   আমি বিচার চাই”  আসিফ ও ডক্টর সিনহার অনুরধে তাঁকে নিচে নামায় রানু , এরপর তার গলা ধরে স্বীকারোক্তি আদায় করে মোবাইলে জবান বন্দি দেয় ,  সে বলে , রানুকে সে ছাঁদ থেকে ফেলে দিয়েছে , কারন সে বেঁচে থাকলে তার আসল চেহারা  সবাই জেনে যাবে

পুলিসকে খবর দেওয়া হয় , আগের রানুর বাবা   ও মা কেও খবর দিয়ে আনা হয়  , সত্য জেনে তারা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে , রানুর যখন  জ্ঞান ফিরে আসে , সে কিছুই বলতে পারে না ,সকাল থেকে ঐদিন রাত পর্যন্ত কি হয়েছে সে কিছুই জানে না ,   আসিফ তাঁকে পরে বুঝিয়ে বলে  , আর এসব শুনে সে অবাক  হয়,

, ডক্টর সিনহা এইসবের  কোনই  ব্যাখ্যা  খুজে পায় না , সে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলতে থাকে , সৃষ্টিকর্তা বলে একজন আছেন , যিনি সমস্থ ব্যাখ্যার উরধে  , আমরা  তো সাধারন মানুষ মাত্র ,  “প্রকৃতি বড়ই অদ্ভুত , মাঝে মাঝে এমন কোন ঘটনা পৃথিবীতে ঘটে যেগুলোর  আসলেও কোন ব্যাখ্যা হয় না  , সৃষ্টিকর্তা  কাকে কিভাবে ন্যায় বিচার পাইয়ে দেবেন , সেটা আমাদের ধারনারও বাহিরে ,

এরপর থেকে ওই বাসায় আর কোন সমস্যা হয় নাই  ,  রানুর শ্বশুর ও শাশুড়ি  এখন রানুর সাথেই থাকে  ,  এক বছর পর তাদের কল জুড়ে এল ফুটফুটে জমজ কন্যা  সন্তান , রানু তার  সংসারের কাজের ফাকে ফাকে তার প্রিয় উপন্যাস গুলো  আবার  পড়া  শুরু করে ,

2 COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here