রম্য রচনা

0
172
rommo

“” রম্য রচনা “”

“পবন” তার শিক্ষাজীবনের ইতি টানিয়া আজ দীর্ঘদিন যাবত শিক্ষা সনদ গুলো বগলে ল‌ইয়া চাকুরীর বাজারে ঘুরিয়া বেড়াইতেছে কিন্তু

কোন ক্রমেই সেই কাঙ্খিত সোনার হরিণটি বগলদাবা করতি পারিতেছে না।

তাহার পিতৃ দেবতা আজ সকালে তাহাকে আল্টিমেটাম দিয়া কহিলেন,

দ্রব্যমূল্যের এই উর্ধ্বগতির বাজারে তোমার মতো বেকার পুত্রধনকে আমি আর উদরপূর্তি পূরন করিতে পারিবো না।

বাছাধন এবার নিজের পথ দেখো ,,,,,,

পবন তার বাবার কথায় ভারাকান্ত মনে বাসা থেকে বেরিয়ে হাঁটতে হাঁটতে হাতিরঝিলে গিয়ে লেকের পাশে বসে রইলো । পেটে প্রচণ্ড ক্ষুধায় চো চো করছে । মানিব্যাগে মাত্র ১৫ টাকা আছে । কি করবে ? কি খাবে ? রাজ্যের চিন্তা তার মাথায়।

১৫ টাকা থেকে   ৫ টাকার বাদাম কিনে অবশিষ্ট ১০ টাকা মানিব্যাগে রেখে যেইনা পকেটে রাখতে যাবে ঠিক তখনি অসাবধানতাবশত মানিব্যাগটি পানিতে পড়ে যায় ।

পবন হায় হায় করে উঠে, তার শেষ সম্বল ১০ টাকা, সেটাও আজ জলে গেলো । মনের দুঃখে ও ১০ টাকার শোকে পবন কাঁদতে লাগলো।

পানির নিচ থেকে এক জলপরী অনেকক্ষণ ধরে পবনকে লক্ষ্য করছিলো, পবনের কান্না দেখে সে আর স‌ইতে পারছিলো না। তাই জলের উপরে এসে জলপরী পবনকে জিজ্ঞাসা করলো :

তোমার কি হয়েছে বৎসঃ ?

তুমি কাঁদছো কেন?

পবন তার মানিব্যাগ হারানোর কথা জলপরীকে জানালো ।

সব শুনে জলপরী পানিতে ডুব দিলো এবং কিছুক্ষণ পরে একটা ডলার ভরা মানিব্যাগ নিয়ে ভেসে উঠলো।

জলপরী  এই ডলার ভরা মানিব্যাগটি কি তোমার?

পবন বললো , না ।

জলপরী আবারো জলে ডুব দিলো এবং কিছুক্ষণ পরে একটা ইউরো ভরা মানিব্যাগ নিয়ে এসে বললো এটা কি তোমার?

পবন বললো, না ।

সর্বশেষে জলপরী যখন পবনের সত্যিকারের মানিব্যাগটা পানির নিচের থেকে তুলে এনে দেখালো , তখন পবন বললো হ্যা হ্যা এটাই আমার মানিব্যাগ।

তখন জলপরী পবনকে বললো: বৎস, আমি তোমার সততায় মুগ্ধ হয়ে তোমাকে তোমার মানিব্যাগের সাথে এই ডলার ও ইউরো ভরা মানিব্যাগ দুইটাও উপহার দিলাম।।।।।

পবন মানিব্যাগ ভরা ডলার ও ইউরো পেয়ে খুশিতে আটখানা,,, আর মনে মনে সে ভাবছে, ভাগ্যিস “” কাঠুরিয়া ও জলপরীর””  গল্পটা তার জানাছিলো ।

পরের অধ্যায় হলো ::: আমাদের দেশে  বেকার ছেলেরা আর কিছু করতে পারুক আর না পারুক খুব সুন্দর ভাবে গুছিয়ে প্রেম করতে পারে, ঠিক তেমনি বেকার পবনের‌ও  একজন প্রেমিকা বা গার্লফ্রেন্ড ছিলো।

পবন, মানি এক্সচেঞ্জ থেকে ডলার ও ইউরো এক্সচেঞ্জ করে অনেক টাকা পেলো, আর সেই টাকা তার গার্লফ্রেন্ডের পিছনে খরচ করতে লাগলো, সেই কি আনন্দ ফূর্তি!!!

তারা বসুন্ধরা সিনেপ্লেক্সে মুভি দেখে, মাওয়া হিলসা রেস্টুরেন্টে খাবার খায় । আড়ং ও যমুনা ফিউচার পার্কে দামী দামী শপিং করে । সে এক এলাহী কান্ড।

এভাবেই চলতে থাকে কিছুদিন, কিন্তু সবকিছুর‌ই শেষ আছে । পবনের‌ টাকাও দ্রুত‌ই শেষ হয়ে যায়। তার মানিব্যাগে সামান্য কিছু টাকা অবশিষ্ট আছে । সে এখন কি করবে ? ভেবে পাচ্ছিলো না আর তার গার্লফ্রেন্ড‌ও আরও কিছু গিফট পাওয়ার লোভে এখনো তার সাথেই আছে।

অর্থকষ্টে চিন্তিত পবন তার গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে হাতিরঝিলে সেই লেকের পাড়ে বসে বাদাম চিবুচ্ছে আর ভাবছে এখন কি হবে?

হঠাৎ আবার‌ও সেই দুর্ঘটনা!! তবে এবার মানিব্যাগ না পড়ে তার গার্লফ্রেন্ড পা পিছলে পানিতে পড়ে গেলো । পবন পড়লো মহাচিন্তায় এখন সে কি করবে ? সে কি পালিয়ে যাবে ?

পবনকে এরকম চিন্তিত দেখে সেই জলপরী আবারো পানির উপরে ভেসে উঠলো এবং পবনকে তার সমস্যার কথা জিজ্ঞাসা করলো ।

পবনের কাছে শুনে জলপরী পানিতে ডুব দিলো এবং কিছুক্ষণ পরে ক্যাটরিনা কাইফকে নিয়ে ভেসে উঠলো।

দেখেতো এটা কি তোমার গার্লফ্রেন্ড?

পবন সঙ্গে সঙ্গে বললো , হ্যা হ্যা এটাই আমার গার্লফ্রেন্ড।।।

জলপরী ভয়ংকর রেগে গেলো , সে পবনকে লোভী , মিথ্যাবাদী, ইতর, ছোট লোক, ছেঙ্গা , বিলাই কুত্তা ইত্যাদি বিভিন্ন ভাষায় গালিগালাজ করতে লাগলো।

তখন পবন জলপরীকে বললো, আরে দাড়াও এত্ত নীতিবাক্য ব‌লার দরকার নাই,

তুমি প্রথমে পানি থেকে ক্যাটরিনা কাইফকে এনে দেখালে, আমি না বললে তুমি দ্বিতীয়বার প্রিয়াঙ্কা চোপড়াকে এনে দেখাবে আমি তখনো না বলে দিলে শেষে তুমি আমার সত্যিকার গার্লফ্রেন্ডকে এনে হাজির করতে, আর যখন‌ই আমি আমার গার্লফ্রেন্ডকে স্বীকার করে নিতাম তখনই তুমি আমার সততায় মুগ্ধ হয়ে আমাকে এই তিনজনকেই দিয়ে দিতে । একজন গার্লফ্রেন্ডের পিছনে খরচ করেই ফকির হয়ে গেছি আর একসাথে তিনজন গার্লফ্রেন্ড থাকলেতো আমাকে দুইটা কিডনী বিক্রি করে এদের পিছনে খরচ করতে হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here